মুখোমুখি IntervieWপৃষ্ঠাসমূহ

মার্চ ২৮, ২০১২

দোষটা তোমার, তাই তুমিই আগে কথা বলবে

সুপ্রভার মনটা ভীষণ খারাপ। বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে ওয়েটিং রুমে মনমরা হয়ে বসে আছেন। রিতিনের মা, আলিফের মা, ইকরার মা_ যাদের সঙ্গে প্রতিদিন এ সময়টা জম্পেশ আড্ডায় মেতে থাকেন সুপ্রভা। আজ যেন তার মনের আকাশে কালবৈশাখী মেঘের ঘনঘটা। এই বুঝি ঝরো ঝরো বৃষ্টি নামবে। রিতিনের মা জিজ্ঞাসা করলেন, কী হয়েছে সুপ্রভা? তোমার মন খারাপ নাকি? সুপ্রভা মুখে কৃত্রিম হাসির রেখা টেনে মাথাটা দু'দিকে দুলিয়ে জবাব দিলেন, কই, কিছু হয়নি তো! হাসলে কী হবে, তার মনের বিষণ্নতাটুকু চোখ দেখলেই বোঝা যায়। ভীষণ রকম ফুলে আছে দু'চোখের পাতা। যেন সারারাত বালিশে মাথা রেখে কেঁদেছেন। সুপ্রভা কাউকে মনের কথাটি বলতে পারেননি। সব কথা কি সবাইকে বলা যায়? কী করে তা অন্যের কাছে বলেন! দু'দিন আগে স্বামী অসীমের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত অসীম তার সঙ্গে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। সুপ্রভাও নিজে জেদ ধরে আছেন_ অসীম না বললে তিনিও বলবেন না। তার মতে, অন্যায়টা অসীমের। তাই তারই আগে স্যরি বলতে হবে। যদিও নিজে কিছুটা উত্তেজিত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন অসীমের এ মৌনতাও সুপ্রভা সহ্য করতে পারছেন না। অসীম একদিন কথা না বললে তার অনেক কষ্ট হয়। অথচ অন্যদিন এরই মধ্যে দু-তিনবার ফোন করা হয়ে যেত। প্রতিদিন অফিসে গিয়ে একবার, ছেলেকে নিয়ে স্কুলে ঠিকঠাক পেঁৗছেছে কি-না সেটা জানার জন্য একবার, ছেলেকে কী টিফিন দেওয়া হলো, সুপ্রভা ওয়েটিং রুমে বসে কী করছে_ এ খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া ছিল অসীমের নিত্যকর্ম।
বিভূতিভূষণের বিখ্যাত উপন্যাস 'অপরাজিত'র মধ্যে অপুর এক বন্ধু নিজের বউয়ের দোষের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, 'দোস্ত, বউটা অতিমাত্রায় ভালো মানুষ। কোনো রাগ নাই, অভিমান নাই, চাহিদা নাই, যা-ই বলি মুখ বুজে করে যায়।' এ জীবন আর ভালো লাগে না। ঘরে একটু ঝগড়াঝাঁটি হবে; কাটাকাটি, মারামারি হবে, তা নয়; কেমন পানসে জীবন! সবাই তো আর অপুর সেই বন্ধুটির মতো নয় যে, বউয়ের এমন স্বভাব পছন্দ করে না। কেউ কেউ তো এমন বউ পেলে মনে করে, সাত রাজার ধন পেয়েছি। পুতুলের মতো বউ। যা বলে তাই করে। দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া হয় না_ এমন দম্পতি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সংসারের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হয়েই থাকে। আবার একটা সময় সেই ঝগড়া মিটেও যায়। কেউ কেউ বলেন, ঝগড়ার পরের অংশটুকু আরও মধুর। তবে ঝগড়া বা মনোমালিন্য বেশিক্ষণ জিইয়ে রাখতে নেই। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মনোকষ্ট বাড়ে। যেমনটি এখন সুপ্রভা অনুভব করছেন।
যখন রাগের মাত্রা বেড়ে যায়_
কোনো একটা বিষয় নিয়ে যখন দু'জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়, তখনই ঝগড়ার সূত্রপাত ঘটে। এ ক্ষেত্রে দু'জনই যদি সমপরিমাণ জেদি হন তাহলে সংঘাতের মাত্রাটা জটিল আকার ধারণ করে খুব অল্পতেই। তাই ঝগড়ার সময়                 0 যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
0 যে বিষয়টা নিয়ে কথা উঠেছে, সেটা নিয়েই কথা বলুন মন খুলে।
0 উচ্চস্বরে না গিয়ে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করুন।
0 ঝগড়ার মধ্যে অন্যকে টেনে আনবেন না বা অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না।
0 স্বামী বা স্ত্রীকে এটা বলবেন না যে, তৃতীয় ব্যক্তির এটা আছে, সে এ রকম। তোমার মধ্যে নেই কেন? তুমি কেন সে রকম হতে পারো না?
0 পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ স্বতন্ত্র_ এটা বুঝতে হবে। যার যে জিনিসটির অভাব তার কাছে সেটা প্রত্যাশা করা উচিত নয়।
0 ঝগড়ার সময় স্বামী বা স্ত্রী কারও বাবা-মা-ভাইবোন ইত্যাদি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কখনও কথা বলবেন না।
0 মধ্যখানে উঠে না গিয়ে শান্তভাবে যুক্তিপূর্ণ অভিযোগ বলার চেষ্টা করুন এবং অন্যপক্ষের অভিযোগ শুনুন।
0 ঝগড়া করে কখনও কথা বলা বন্ধ করে দেবেন না, বিছানা আলাদা করবেন না। এতে দূরত্ব বেড়ে যাবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশি সময় নেবে।
0 জিনিসপত্র ভাংচুর করবেন না। খুব বেশি উত্তেজিত হলে ১০০ থেকে ১ পর্যন্ত গুনুন মনে মনে। রাগ কেটে যাবে।
0 ঝগড়ার মাত্রা বেড়ে গেলে কখনই অন্যপক্ষের গায়ে হাত তোলা ঠিক নয়।
ঝগড়া মেটানোর উপায়_
0 অনেকেই আছেন নিজের দোষ মোটেও দেখেন না বা দেখলেও স্বীকার করতে চান না। এ ধরনের মনোভাবের ব্যক্তিদের মধ্যে নিত্যদিন কলহ ঘটে থাকে। এমন মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে।
0 নিজেকে অন্যের জায়গায় মনে মনে প্রতিস্থাপন করে দেখতে হবে, 'আমি হলে এখানে কী করতাম'।
0 নিজের দোষ বুঝতে পারলে সঙ্গীকে 'স্যরি' বলতে দেরি করবেন না। সত্য স্বীকার করার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই। এতে তার শ্রেষ্ঠত্বটাই বরং প্রমাণিত হয়।
0 ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে_ 'কিস অ্যান্ড মেকআপ'। সহজে ঝগড়া মিটিয়ে ফেলার এটি একটি সহজ সমাধান।
0 স্বামী বা স্ত্রীকে পছন্দের উপহার দিন। স্পেশাল রান্না করুন। বাইরে বেড়াতে যান। দেখবেন তুড়ি মেরে উড়ে গেছে কলহের রেশ।

লেখা : মেহেরুন নেছা রুমা; ছবি :তানিয়া শুকরানা

কোন মন্তব্য নেই: